আমরা সবাই জানি, ধূমপান স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান শরীরে ধীর বিষক্রিয়া ঘটায় জানা সত্ত্বেও ধূমপায়ীরা ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে পারে না। ধূমপায়ীদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান হল নিকোটিন। নিকোটিন খুব সহজেই শরীরের রক্তনালীতে মিশে গিয়ে বিক্রিয়া করে এবং শরীরের রক্তচাপ মুহূর্তের মধ্যেই বৃদ্ধি করে দেয়। নিকোটিন ফুসফুসকে অকৃতকার্য করে দেয়, ত্বককে নষ্ট করে দেয় এবং আপনাকে ৫-২০ বছর পর্যন্ত বেশি বয়স্ক বানিয়ে দিতেও এটি সক্ষম। তাছাড়া দেখা যায় যে, ৯০% ফুসফুসের ক্যানসার আক্রান্ত রোগীই ধূমপায়ী ছিল। ধূমপায়ীরা ধূমপান ছেড়ে দিলেও নিকোটিনের প্রভাব শরীরে কয়েক বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। কিন্তু সুষম ও পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন আপনাকে সাহায্য করতে পারে শরীর থেকে নিকোটিন বের করতে।
যে ৭টি খাবার যা আপনার শরীর থেকে নিকোটিন বের করবেঃ
১। কমলাঃ
কমলা খুবই সুস্বাদু ও মুখরোচক ফল। এতে রয়েছে প্রছুর পরিমানে ভিটামিন সি। আপনি ঔষধের জগতে অনেক ঔষধ পাবেন যা কমলা দিয়ে বানানো হয়, যা আপনার রুচি ও ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। কিন্তু নিকোটিন দূরীভূত করতে আপনি কমলা সরাসরি খাবেন। নিকোটিন দেহে ক্ষুদামন্দা ও দুর্বলতা সৃষ্টি করে। তাই আপনার খাদ্য চার্টে সরাসরি কমলা যোগ করে নিবেন। কমলা দেহ থেকে নিকোটিন দূর করতে সাহায্য করবে।
২। ব্রকলি / রঙিন ফুলকপিঃ
ব্রকলি বলতে বিভিন্ন রঙের ফুলকপিকে বুঝায়। বাজারে দেখবেন বেগুনি, খয়েরি ও অনেক ধরনের রঙের ফুলকপি পাওয়া যায়। ঐগুলোকে ব্রকলি বলা হয়। ব্রকলিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও বি৫ রয়েছে। ধূমপান শরীর থেকে ভিটামিন সি কে ধ্বংস করে দেয়। সতরাং, ভিটামিন সি কে পুনরায় শরীরে স্থাপন করতে আপনাকে বেশি বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। তাই ব্রকলিকে আপনার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন। ব্রকলি শরীর থেকে নিকোটিনকে বের করতেও সক্ষম।
৩। গাজরঃ
ভিটামিন এ, বি, সি ও কে এর বৃহত্তম উৎস হল গাজর। একটা জিনিস আপনার মাথায় রাখা খুব প্রয়োজনীয় যে একটা সিগারেটের নিকোটিন আপনার শরীরে ৩ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। তাই আপনার উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিকতিঙ্কে দেহ থেকে বের করা। প্রতিদিন ধূমপানের পর একটি করে গাজর খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাছাড়া আপনি যদি ধূমপান ছেড়ে দিয়ে থাকুন তাহলে প্রতিদিন সকাল ও রাতে ১ গ্লাস করে গাজরের জুস পান করুন। এতে করে আপনার শরীরের জমাকৃত নিকোটিন দূরীভূত হবে। তাছাড়া গাজর ত্বকের নানা সমস্যাও দূরীভূত করে।
৪। কিউই ফলঃ
কিউই ফল অর্থাৎ Kiwi Fruit একটি জাদুকরি ফল যাতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি ও ই। এই উপাদান গুলো শরীর থেকে নিকোটিন দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ধূমপান শরীরের ভিটামিন সি ধ্বংস করে দেয়। তাই শরীরে ধ্বংস ভিটামিন সি এর ঘাটতি মিটাতে কিউই ফল খাওয়া প্রয়োজন। শরীরের নিকোটিনকে বের করতেও কিউই ফলের জুড়ি নেই।
৫। আমলকীঃ
আমলা টক ও সুস্বাদু ফল যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। ধূমপান শরীরের ভিটামিন সি কে নষ্ট করে দেয়। যেহেতু আমলকীতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি আছে, তাই আমলকীকে আপনার খাদ্য তালিকায় নিঃসন্দেহে যুক্ত করে নিন। আমলকী খাবার হজমেও সহায়তা করে এবং নিকোটিনের প্রভাবকে নষ্ট করতে সাহায্য করে। আমলকীতে ফাইবার, কার্বো- হাইড্রেট, আইরন, প্রোটিন এবং অ্যাস্করবিক এসিড আছে যা আপনাকে স্বাস্থ্যবান করে তুলতেও সাহায্য করে।
৬। পালং শাকঃ
শাক সব্জির জগতে পালং শাক অন্যতম। সব ধরনের শাক-সব্জি শরীরের জন্য বহু দিক দিয়ে উপকারি। কিন্তু নিকোটিনকে নিস্ক্রিয় করনে পালং শাকের ভুমিকা অন্তহীন। তাছাড়া এটি নিকোটিনের সাথে সাথে অন্যান্য ময়লাকে শরীর থেকে দূর করতে সাহায্য করে।
৭। পানিঃ
ধূমপান আমাদের শরীরকে শুষ্ক ও পানিশুন্য করে দেয়। তাই ধূমপায়ীদের পানি পান অত্যাবশ্যকীয়। অনেক গবেষণাকারী বলেছেন, বেশি বেশি পানি পান করার অভ্যাস ধুমাপান ছাড়তে সাহায্য করে। পানি শরীর থেকে নিকোটিন দূর করতে সাহায্য করে।
ধুমাপান স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দুইটাকেই ধ্বংস করে। তাছাড়া ধূমপান অর্থেরও অপচয়। তাই ধূমপান ছেড়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ধূমপান থেকে নিজেও বিরত থাকুন, অন্যকেও রাখুন।
0 comments:
Post a Comment